একজন ডাক্তারের মন মানসিকতার অন্তরাল থেকে...

ডিউটি রুমে বসে আছেন। হটাৎ ইন্টারকমে নার্সের ফোন। “ডক্টর, কেবিন ৪১৪-র রোগী খারাপ হয়ে গেছে, একটু দেখে যান।” স্টেথো আর বিপি হাতে কেবিনের দিকে পা বাড়ালেন। আগে থেকেই জানা বৃদ্ধের অবস্থা খারাপ, হাইয়ার সেন্টারগুলোতে রেফার করার পরেও রোগীর পার্টি অপারগতা জানিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে চেয়েছে এখানেই।

বৃদ্ধের পাশে শুধু একজন মহিলা। একপলক রোগীকে দেখে অভিজ্ঞতাই জানিয়ে দিলো ডাক্তারকে, এই দেহ প্রাণহীন। তারপর শুধু নিয়মরক্ষার মতো পরীক্ষাগুলো করে গেলেন। শেষ করে ডেথ ডিক্লেয়ার করলেন ১.৪৫ মিনিটে। কথা শুনে পাশের মহিলা ফোঁস করে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলতে শুনলেন। এটাকি দীর্ঘদিন কষ্টে ভোগা মানুষটার মুক্তিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস নাকি বুকের গভীরে জমানো বেদনার প্রকাশ ডাক্তার বুঝতেই পারলেন না।

রোগীর ফাইল সিস্টারকে ডাক্তার রুমে পাঠাতে বলে ফিরতি পথে পা বাড়ালেন। দুই মুহূর্তের জন্য মনে প্রশ্ন এলো, আর কি কিছু করার ছিল রোগীর জন্য? ভিতর থেকে উত্তর আসলো, “না।”
এই স্বস্তিতে ডাক্তার আবার একটু পরেই ভুলে যাবেন বিষয়টি, মনে খুব একটা ছাপই ফেলবে না ব্যপারটা। এমন ঘটনা অনেকবার ঘটে গিয়েছে জীবনে। জীবন মরনের সেতুবন্ধনের পারাপারটা এখন ডাক্তারকে খুব একটা বিচলিত করে না।

বাস্তবে এই মেডিকেল স্টুডেন্ট আর ডাক্তারী জীবনটা চিকিৎসার জন্য জ্ঞানার্জনের সাথেসাথে কিছু খারাপ ধরনের মানসিক ক্ষমতা অর্জনের শিক্ষা। সোসিওপ্যাথিক অনেকগুলো গুন অর্জন না করলে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যায় এই জীবনে।



একজন সোসিওপ্যাথের (Sociopath) আদর্শ বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করুনঃ
১) লজ্জাহীনতা ২) মিথ্যে বলার বিশেষ ক্ষমতা ৩) প্রতিকূল পরিবেশেও শান্ত থাকার প্রবনতা ৪) প্রথম দৃষ্টিতে মানুষের কাছে খুবই আকর্ষণীয় মনে হবার ক্ষমতা ৫) সাধারণ মানুষ থেকে বুদ্ধিমান হবার বৈশিষ্ট্য ৬) মানুষকে মেনিপুলেট/ব্যবহার করার ক্ষমতা ৭) হটাৎ করেই প্রচণ্ড রাগ দেখানোর প্রবনতা ৮) হিউজ এগো বা গভীর আত্মসম্মানবোধ ৯) ক্রমাগত একদৃষ্টিতে কারো কথা শুনার ক্ষমতা ১০) মানুষের মুখ দেখে মনের ভাব বুঝতে পারার ক্ষমতা। ১১) বাইরে অনেক বন্ধুর মাঝে বাস্তবে খুব স্বল্পসংখ্যক সত্যিকারের বন্ধু ১২) যাদের বন্ধু মনে হয়, তাদেরকে সমাজের অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলার প্রবনতা।

নিজের সাথেই একবার মিলিয়ে দেখুন কয়টা ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে।

প্রথমবর্ষের প্রথম কার্ড ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো যেদিন, সেইদিনের কথা মনে পড়ে। ক্লাসের মাঝেই রেজাল্ট খারাপ হয়েছে শুনে অনেকেরই চোখে বাঁধ ভাঙ্গা কান্না। অনেকে ক্লাস থেকেও বের হয়ে গেলো। আজকে প্রায় ৭/৮ বছর পরে সেই আমাদেরই এখন রোগীর মৃত্যু দেখলেও একটু দীর্ঘশ্বাস ব্যতীত আর কোন অনুভূতি মনের মাঝে আসবে না। আরও অসংখ্য উদাহরণ পাবেন একটু খুঁজলেই, যেখানে নিজেই বুঝতে পারেন নিজের অনুভূতির ঘাটতি থেকে গেছে। মানবতার সেবা আর জ্ঞানার্জনের নামে নিজের আদি ও অকৃত্রিম অনুভূতিগুলো কতোখানি হারিয়ে ফেলেছেন একবার ভেবে দেখেছেন কি? নাকি হেসেই উড়িয়ে দিবেন এটাকে বড় হবার কুফল ভেবে?
Share:

1 টি মন্তব্য:

Dr. Lala Shourav Das বলেছেন...
এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।

এক নজরে...



ডাঃ লালা সৌরভ দাস

এমবিবিএস, ডিইএম (বারডেম), বিসিএস (স্বাস্থ্য)

ডায়াবেটিস, থাইরয়েড এবং হরমোন বিশেষজ্ঞ (এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট)

সহকারী সার্জন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা

কনসালটেন্ট, ওয়েসিস হাসপাতাল, সিলেট

প্রাক্তন আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন), পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

মেম্বার অফ বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি

মেম্বার অফ আমেরিকান এ্যাসোসিয়েশন অফ ক্লিনিকাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট



Subscribe

Recommend on Google

Recent Posts