• ডাঃ লালা সৌরভ দাস,কনসালটেন্ট এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, এখন থেকে সিলেটের সোবহানীঘাটে ওয়েসিস হাসপাতালে ছুটির দিন বাদে বিকেল ৫টা - ৮টা রোগী দেখবেন।

  • শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন

    মানবদেহের সংক্রামক রোগসমূহ আমাদের দেহে প্রবেশ করে অপরিষ্কার পরিবেশে জীবনযাপনের জন্য। এমনকি সংক্রামক নয় এমন রোগসমূহও প্রবল আকার ধারন করে এমন পরিবেশে। তাই নিজের, পরিবারের এবং সমাজের সবার নিরাপত্তার স্বার্থে পরিষ্কার পরিছন্নতায় গুরুত্ব দিন।

  • শাঁকসবজি সহ পুষ্টিকর সুষম খাদ্যতালিকা মেনে খাবার গ্রহন করুন

    ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের চর্বি বৃদ্ধি, দেহের ওজন বৃদ্ধি, ক্যান্সার সহ নানা সমস্যার সমাধান দিতে পারে সুষম খাদ্যতালিকা মেনে পরিমিত পরিমানে খাবার গ্রহনের অভ্যাসটি। এরই সাথে নিয়মিত ব্যায়াম, শারীরিক পরিশ্রম এবং পর্যাপ্ত ঘুম অত্যাবশ্যক।

  • বাসায় নিয়মিত ডায়াবেটিস পরিমাপের গুরুত্ব

    ডায়াবেটিস রোগীর নিজের রক্তের সুগার নিজে পরিমাপের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন ডায়াবেটিস রোগী নিজের রক্তের সুগার মেনে নিজেই বুঝতে পারেন তা নিয়ন্ত্রনের মাঝে আছে কিনা এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তের সুগার অতিরিক্ত কমে যাওয়া) নির্ণয় করে তা প্রতিরোধ করতে পারেন।

  • 1st BES-MAYO Advance Course in Endocrinology in Bangladesh

    The mid of 2018 brings an exciting news for Bangladeshi Endocrinologists. Mayo Clinic, a nonprofit academic medical center based in Rochester, Minnesota, focused on integrated clinical practice, education, and research and also world's number one Endocrine center is going to arrange a "Advance Course in Endocrinology" in collaboration with Bangladesh Endocrine Society on 24th-25th January, 2019

বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস

গতবছরের জুলাইয়ের দিকের কথা। ইন্টার্নশিপের অংশ হিসাবে কেজুয়ালিটিতে ডিউটি চলছে তখন। একদিন সন্ধ্যাবেলা ডিউটিরুমে বসে আছি আমি, সাথে আরেকজন সিনিয়র ভাইয়া। পেসেন্টের চাপ না থাকায় বসে বসে টিভি দেখছি। এমন সময় ওয়ার্ডবয় এসে খবর দিলো দুইটা বাচ্চা রোগী এসেছে। কেজুয়ালিটিতে বড়দের চিকিৎসার থেকেও খারাপ হল বাচ্চাদের চিকিৎসা করা। এরা সম্ভব হলে চিৎকার করে কানের পর্দা ফাটায়। তারপরেও নিতান্ত বাধ্য হয়েই পা বাড়ালাম।



ইমারজেন্সি রুমের ভিতরে ঢুকে আমার চক্ষু চড়কগাছ। দুটো বাচ্চার গাল, পিঠ আর হাত পায়ে শুধু কামড়ের দাগ! বাচ্চাগুলো সম্ভবত শকের কারনে কান্না করতেও ভুলে গেছে। বাচ্চার সাথের লোকজনকে জিজ্ঞেস জানলাম, এরা চাঁদপুর থেকে এসেছে। ওইখানে একটা এলাকায় এক কুকুর পাগল হয়ে সবাইকে কামড়ে দিচ্ছিল। বাচ্চাদুটো খেলার মাঠে গিয়ে সেই কুকুরের সামনে পড়ে গেছে। ওয়ার্ডবয়কে সাথে ডিউটিতে থাকা সিনিয়র ভাইকে ডাকতে বলে থার্ড ইয়ারের কমিউনিটি মেডিসিনের পাতায় কোনকালে পড়া রেবিস/জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা মনে করার চেষ্টা চালালাম। এর আগে কখনো এরকম কেইস দেখা হয়নি আমার। দ্রুত যা মনে পড়ে তা দিয়েই রোগীর পার্টির কাছে কিছু জিনিসপত্র আনার লিস্ট ধরিয়ে দিলাম। ভাইয়া এসে সাথে রেবিস ভ্যাক্সিনের নামটা যোগ করলেন।

ওয়ার্ড বয়ের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক ভাবে নরমাল স্যালাইন এনে কামড়ের জায়গাগুলোতে ঢালা হল। এবার বাচ্চাগুলোর কান্না শুরু হল। মায়াদয়া না দেখিয়ে বেশ নির্মমভাবেই কামড়ের জায়গাগুলো জ্বালাময়ী সব সাবান, এন্টিসেপটিক সল্যুশন দিয়ে ওয়াশ করতে হল। এদের মুখের উপরে গালের চামড়াগুলো ক্ষতবিক্ষত। রোগীর মা বারবার বলতে লাগলেন, আমার মেয়ের গালটা অন্তত সেলাই করে ঠিক করে দেন। অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত বুঝানো হল রোগীর চিকিৎসার স্বার্থেই রোগীর কোন ক্ষততে তাৎক্ষণিক ভাবে সেলাই করে দেয়া যাবে না। তবুও মায়ের কান্না আর থামে না।
শেষমেশ ওয়াশ আর এন্টিরেবিস ভ্যাক্সিন দেয়া শেষ হবার পড়ে গ্লাভস খুলে মোবাইলটা বের করলাম। আর কোন কিছু বাদ পড়লো কিনা জানা দরকার। আরেক সিনিয়র ভাইয়াকে ফোন দিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বলার পর গালে আর ঘাড়ে কামড়ের কথা শুনে তিনি ক্যাটাগরি-৩ রেবিস এক্সপোজার হিসাবে পেসেন্টকে রেবিস ভেক্সিনের সাথেসাথে রেবিস ইউমিনোগ্লবিউলিন দেয়া প্রয়োজন বলে ধারনা করলেন। এরপর আরেক বিপত্তি, এটা নাকি কুমিল্লায় পাওয়া যায় না। এমনকি ঢাকার অনেক নামীদামী ফার্মেসীতেও পাওয়া যায়না। শেষমেশ তিনি খোঁজ নিয়ে জানালেন, খুব সীমিত পর্যায়ে মহাখালীর সংক্রামক রোগ হাসপাতালে এটার সরবরাহ রয়েছে। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা আর এন্টিরেবিস ভ্যাক্সিন দেয়ার পড়ে রেবিস ইউমিনোগ্লবিউলিন দেয়ার জন্য বাচ্চা দুটোকে সেখানে রেফার করা হল।
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জলাতঙ্ক রোগ দিবস। এই রোগ এমনই ভয়ঙ্কর যে একবার রোগের লক্ষন দেখা দিলে ধরে নিতে হয় মৃত্যু একশত ভাগ নিশ্চিত। এই পর্যন্ত পৃথিবীতে শুধুমাত্র ৭ জন ব্যাক্তি এই রোগ হবার পরে জীবিত ছিল, সেটাও সাথে সাথে ভ্যাক্সিন সহ আরও অন্যান্য চিকিৎসার জোরে। কিন্তু বাকিদের ভাগ্য এতো প্রসন্ন হয় না। এদের জন্য থাকে বেদনাদায়ক মৃত্যু। অথচ এই রোগ সঠিক চিকিৎসায় ১০০% ই প্রতিরোধযোগ্য।

জলাতঙ্ক বা রেবিস নিয়ে অনেক কথাবার্তা হলেও এটাকে নিয়ে জানার কিছুটা দিকে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে। এর কিছুটা পূরণে রেবিস নিয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা তুলে ধরছি।

রেবিস/জলাতঙ্ক রোগ কি?

- এটি একটি ভাইরাস সৃষ্ট রোগ। রেবিস ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত কুকুর, শিয়াল, নেকড়ে, বাদুড় এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ঘোড়া এবং গরুর দেহ থেকে এটি মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। তবে ৯৬% ক্ষেত্রে কুকুর থেকেই (কুকুরের কামড় অথবা লালা থেকে) এই রোগ মানবদেহে প্রবেশ করে। ভাইরাসটি আক্রান্ত স্থানের নার্ভটিস্যুতে প্রবেশ করে এবং প্রতিদিন ১২-২৪মিমি করে ব্রেইন এবং স্পাইনাল কর্ডের দিকে এগুতে থাকে। রেবিস ভাইরাস একবার ব্রেন টিস্যুতে প্রবেশ করলে মৃত্যু নিশ্চিত। কামড়/আক্রান্ত হওয়া থেকে রোগের লক্ষন প্রকাশ পাওয়ার সময়কাল কয়েকদিন থেকে শুরু করে এক বছর পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু লক্ষন প্রকাশের ১ থেকে ৭ দিনের মাঝে রোগী যতই চিকিৎসা করা হোক না কেন, শেষমেশ মারাই যায়। তাই সংক্রামক পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার পরপরই লক্ষন প্রকাশের আগেভাগেই উপযুক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়াই এই রোগের হাত থেকে বাঁচার উপায়।

রোগে আক্রান্ত কুকুরের লক্ষন কি?

- ১) কোন কারন ছাড়াই কামড় দেয়ার প্রবনতা। ২) কারন ছাড়াই ছুটাছুটি এবং গর্জনের প্রবণতা। ৩) মুখ দিয়ে ক্রমাগত লালাক্ষরণ হতে থাকা।

আক্রান্ত রোগীর লক্ষন কি?

- ১) আক্রান্ত জায়গায় প্রাথমিক ভাবে ব্যাথা এবং চিনচিনে অনুভূতি। ২) পানির প্রতি ভীতি (যে কারনে রোগের নাম জলাতঙ্ক)। ৩) অস্থিরতা, অতিরিক্ত লালাক্ষরণ, খিঁচুনি এবং সবশেষে মৃত্যু।
কোন কুকুরের কামড় খেলে প্রাথমিক ভাবে কি করবেন?

- টেপের পানি/নরমাল স্যালাইন হাতের কাছে যাই পান তা দিয়ে অন্তত ১৫ মিনিট ক্ষতস্থান পরিষ্কার করা। সাথে সাবান ব্যবহার করে যতটুকু সম্ভব ফেনা তুলে ক্ষতস্থানটি পরিষ্কার করা। এরপর পভিডন আয়োডিন অথবা ডেটল অথবা সেভ্লন সল্যুশন ব্যবহার করে ক্ষতস্থান আবারো পরিষ্কার করা। সবকিছুর প্রথমে নিজের সেফটির জন্য গ্লাভস পরে নিবেন অবশ্যই। যত দ্রুত সম্ভব, ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

লেখার এই অংশটা মেডিক্যাল স্টুডেন্ট / আমার মতো অজ্ঞ ডাক্তারদের জন্যঃ

## কি মেসেজঃ

- ওয়াশ, ওয়াশ এন্ড ওয়াশ। ক্ষতস্থানে কোন সেলাই দিবেন না। একটু দেরী করে সেকেন্ডারি ক্লোজার করাই ভালো। শুধু অতিরিক্ত রক্তপাত হলে সেটি বন্ধের ব্যবস্থা নিবেন।

- ভ্যাক্সিন শিডিউলঃ ১) ইসেন শিডিউল অনুসারে ৫ দিন ৫ ডোজ। ডে-০, ডে-৩, ডে-৭, ডে-১৪ এবং ডে-২৮ এ ইন্ট্রামাস্কুলার ইঞ্জেক্সন। ২) জেগরেব শিডিউল অনুসারে ৩ দিনে ৪ ডোজ। ডে-০ তে দুই হাতে দুটো ডোজ তারপর ডে-৭ আর ডে-২১ এ আরেকটা ডোজ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে জেগরেব শিডিউলকে আদর্শ ধরা হয়ছে। এই ভ্যাক্সিনগুলো সদর হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। আবার দোকানেও কিনতে মিলে। প্রেগন্যান্ট মহিলাকেও এটি দেয়া যাবে।

- ইমিউনোগ্লবিউলিনঃ ক্যাটাগরি-৩ ইঞ্জুরির (মাল্টিপল বাইট, হাতের আঙুল, মুখ, গলা যেসব অংশে নার্ভ সাপ্লাই বেশী সেই সব জায়গায় কামড়) ক্ষেত্রে ভেক্সিনের সাথে ইমিউনোগ্লবুলিন দেয়া উচিৎ। প্রথম ডোজের ভ্যাক্সিন দেয়ার সাতদিনের মাঝেই এটা দিতে হবে। এটি ক্ষতস্থানে (২০IU/Kg maximum 1500IU) ইনফিল্ট্রেট করে দেয়া হয় মূলত, আবার ডেলটয়েড মাসলের দেয়া যাবে। তবে ভ্যাক্সিন যে জায়গায় দিয়েছেন সেই জায়গায় না এবং ভ্যাক্সিন আর ইমিউনোগ্লবিউলিন দেয়ার জন্য পৃথক পৃথক সিরিঞ্জ ব্যাবহার করতে হবে। ইমিউনোগ্লবিউলিন বায়োলজিকাল প্রডাক্ট বলে রিএকশন করতে পারে, তাই সেটার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত (এড্রেনালিন, হাইড্রোকরটিসন, ফেনারগন, রেনিটিডীন ইনজেকশন) রাখতে হবে।

দেশে সংক্রামক রোগের ন্যাশনাল গাইডলাইনে জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসার সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। একইসাথে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের আরেকটি গাইডলাইন আছে। দুটোর পিডিএফ ফাইল হিসাবে নিচে ডাউনলোডের জন্য দিয়ে দিলাম।

জলাতঙ্ক নিয়ে জাতীয় গাইডলাইন (২০১০) – http://goo.gl/75OxqE
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন গাইডলাইন - http://goo.gl/OZiQZK

Update: Incepta has also brought Rabix-IG, which should be available countrywide. 
Share:

মেডিক্যালীয় রহস্যঃ সিন্ড্রোম এক্স

ছোটবেলায় প্রতি শুক্রবারেই দেখতাম মামাতো ভাইদের গভীর আগ্রহে বিটিভিতে “The X-files” সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করতে। টিভি সিরিয়ালটা শুরু হতো বিটিভির রাতের খবরের পরে। অনেক আগ্রহ নিয়ে আমিও সারাদিন অপেক্ষা করে রাতের খবর দেখতে দেখতে কখন যে সিরিয়াল শুরু হবার আগেই ঘুমিয়ে পরতাম, বলতেও পারতাম না। পরদিন সকালে উঠে আফসোসের সীমা থাকতো না। মাঝেমাঝে দুই-একদিন বিরক্তির সীমা কাটিয়ে রাতের খবর পার করে সিরিয়ালের সময় পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে “The X-files” এর সূচনায় মিউজিকটা শুনেই একরকম শিহরণ জাগতো। প্রতি পর্বে রোমহর্ষক এক একটা রহস্য, সমাধানের বাইরে! “X” শব্দটাই যেন রহস্যময়।

The X-files এর হয়তো অনেকটাই কাল্পনিক। কিন্তু চিরকাল এই “X” শব্দটা মানুষকে রহস্যের স্বাদ দিয়ে গেছে। আমার চিরাচরিত মেডিকেল প্রসঙ্গ নিয়ে আসি, মেডিকেলের এমনই একটা অমীমাংসিত কেইসকে এখনো বলা হয় “Syndrome X”।

১৯৯৩ সালের ৮ই জানুয়ারিতে আমেরিকার বাল্টিমোরের মেরিল্যান্ডের জন্ম নেয় এক মেয়ে শিশু, নাম দেয়া হয় ব্রক গ্রীনবারগ (Brooke Greenberg)। জন্মের সময় পায়ের একটা হাড় কোমরের একটা জয়েণ্ট থেকে একটু আলাদা থাকা (হিপ ডিসলোকেশন) এই ছাড়া আর কোন সমস্যাই ছিল না তার। এই সমস্যা অপারেশন করে ঠিক করে দেয়া হয়, ব্রুককে স্বাভাবিক সুস্থ বাচ্চার মতোই দেখায় তখন।

এরপর ৬ বছর বয়সের মধ্যে তাকে একের পর এক মেডিকেলীয় সমস্যার মধ্য দিয়ে পার করতে হয়, একবার স্টোমাকে পারফরেসন (পাকস্থলীতে ফুটো হয়ে যাওয়া), একবার খিঁচুনি, একবার ব্রেন স্ট্রোক। এমনকি একবার ব্রেন টিউমার ডায়গ্নসিস হওয়ার পর কয়েকদিন পর টিউমারটি গায়েব হয়ে যায়।
একসময় হটাৎ করেই ব্রকের বাবা লক্ষ্য করেন যে মেয়ের বয়সের সাথে আর শরীরটা বাড়ছে না। ব্রকের ছোটবোন শারীরিক ভাবে বড় হয়ে ব্রককেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে! তার ধারণার সাথে ডাক্তাররাও প্রমাণ খুঁজে পান যে ব্রকের বয়স বাড়া হটাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রকের ক্রমোজম পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সাধারণ মানুষের ক্রমোজমের সাথে তার ক্রমোজমের কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না তখন। এমনকি ক্রমোজমের যেসব অংশ বয়স নিয়ন্ত্রণ করে এবং বয়স সংক্রান্ত রোগ ঘটায় (যেমনঃ প্রজেরিয়া) এরকম এবনরমাল ডিএনএ বা কোনকিছুই পাওয়া যায়নি তার পুরো ডিএনএ সিকুন্যন্সিং করানোর পরেও।



ব্রকের সাথে জন্ম নেয়া ছেলে মেয়েরা স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে কলেজে ঢুকে পড়ে, কিন্তু ব্রকের চেহারা, মানসিকতা এবং আচার আচরণ থেকে যায় ছোট বাচ্চার মতো। ১৬ বছর পার করা ব্রকের ব্রেইন পরীক্ষা করে দেখা যায় সেটা ছোট বাচ্চার ব্রেনের থেকে বেশী কিছুতে ডেভলাপ করেনি। তার মন ছিল ৮ থেকে ১২ মাস বয়সী বাচ্চার মতো। ব্রক বড় হতে থাকে তার ছোটবোনের কোলে। ব্রক ছোটবাচ্চাদের মতোই কথা বলতে পারতো না, শুধু মুখ দিয়ে কিছু শব্দ করতে পারতো। হাড় বা দাঁতগুলোও ছিল অপরিপক্ক। শুধু বাড়তো তার চুল আর নখটুকু। দেহের বিভিন্ন অংশের একেক রকম বাড়তে দেখে বিজ্ঞানীরা এখনো ধারনা করেন ব্রকের শরীরের একেকটা সেল ছিল একেক বয়সের। যেন একেকটা আলাদা আলাদা গাড়িতে করে চলা। একে ব্যাখ্যা করার মতো আজো উপযুক্ত কোন কারন খুঁজে পাননি তাঁরা। ব্রককে নিয়ে প্রচুর গবেষণা এবং ডকুমেন্টারি নির্মিত হয়, ইচ্ছে হলে গুগুলে Brooke Greenberg লিখে একটু খুজলেই দেখতে পাবেন।

১৯৯৩ থেকে ২০১৩ সাল, ২০টি বছর ছোট্ট বাচ্চা থাকার পরে যে হাসপাতালে ব্রক জন্ম নিয়েছিল ঠিক সেই হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করে। তার মৃত্যুর কারনটা পারিবারিক ভাবে গোপন রাখা হয়। শুধু ব্রক না, পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম আরও কিছু বাচ্চার প্রায় একই রকম কেস খুঁজে পাওয়া যায়। সবগুলোই এখন চলমান গবেষণার কেস। এখনো পর্যন্ত অমীমাংসিত এই রোগ (??) অথবা রহস্যের নাম দেয়া হয় “সিন্ড্রোম-এক্স”। এগুলোই বাস্তব জীবনের সত্যিকারের এক্স ফাইল।।
Share:

ডায়বেটিস এবং কিছু প্রচলিত প্রশ্ন

প্রথমবর্ষের ফিজিওলজি থেকে শুরু করে মেডিকেল লাইফে যতদিন থাকা, ততদিনই সম্ভবত ঘুরে ফিরে বারবার “ডায়বেটিস” শব্দটির মুখোমুখি হওয়া। কখনো পরীক্ষার হলে, কখনো পরিবারের লোকজনের কাছে কখনো রোগীর কাছে। এমনকি মেডিকেল স্টুডেন্ট/ডাক্তার না হলেও প্রতিনিয়ত পরিবার আর সমাজের এই শব্দের মুখোমুখি হওয়া। এতোকিছুর পরেও এই পরিচিত মুখটিকে নিয়ে কিছু অজ্ঞতা থেকেই যায়।





গত দুই মাসের ডায়বেটিক হাসপাতালে কাজ করতে গিয়ে নিজের অজ্ঞতাগুলো নতুন করে আবিষ্কার করলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকে কিছু জিনিস শেয়ার করা।

>> আমার রোগীর কয়েকদিন আগে প্রথমবার ডায়বেটিস ধরা পড়লো। রোগী কি কখনো ভালো হবে??
>> অনেক বছর আগে ডায়বেটিস ধরা পড়ছিলো ডাক্তারসাহেব, এরপর ভালো হয়ে গেছি।
>> রিপোর্টে তো ডায়বেটিস নাই ডাক্তারসাহেব, তারপরেও ডায়বেটিসের ঔষধ দিলো কেন?
>> ইনসুলিনের বদলে মুখে খাবার ঔষধ দেন তো স্যার, ইনসুলিন নিতে ভালো লাগে না।
>> ডাক্তারসাহেব, আমার ওজনতো এতো বেশী না। তাহলে ডায়বেটিস কিভাবে হল?

এরকম বেশ কিছু প্রশ্ন প্রতিনিয়ত রোগী এবং রোগীর লোকজনের মুখ থেকে শুনতে পাই। অন্য কোন রোগের ব্যাপারে মানুষ এতো প্রশ্ন জানতে চায় না, যতটা না এই রোগ নিয়ে জানতে চায়। ডায়বেটিস নিয়ে বিপুল জনসচেতনতাই এতো প্রশ্ন সৃষ্টির কারন।

>> রোগী কি ভালো হবে? / অনেক বছর আগে ডায়বেটিস ধরা পড়ছিলো ডাক্তারসাহেব, এরপর ভালো হয়ে গিয়েছিলাম?

> ডায়বেটিসকে এখনো পর্যন্ত বলা হয় অনিরাময়যোগ্য রোগ। টাইপ-১ ডায়বেটিস, যেটা কিনা পেনক্রিয়াসের সেল ড্যামেজ থেকে হয়ে থাকে, সেটি পেনক্রিয়াস ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট অপারেশন করে তাক্তিকভাবে নিরাময়যোগ্য। কিন্তু বেশ খারাপ ধরনের রিস্ক থাকার কারনে পেনক্রিয়াস ট্র্যান্সপ্ল্যান্টের ইন্ডিকেসনটা এখনো পর্যন্ত খুবই সীমিত এবং বাংলাদেশের মতো দেশে সুযোগটা আরও সীমিত।

> টাইপ-২ ডায়বেটিস যেটা কিনা পেনক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন কমে যাওয়ার সাথে সাথে শরীরের ইনসুলিনের ব্যবহারের প্রতি রেজিস্টেন্স জন্ম নেয়, সেটি এখন পর্যন্ত অনিরাময়যোগ্য। খুব অল্প রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে একবার টাইপ-২ ডায়বেটিস হওয়ার পরে রোগটা অনেকটা রিমিসনে যেতে পারে। এখানে রিমিসন মানে কি? এটাকে ব্যাখ্যা করা যায় এইভাবে, রোগের সাইন সিম্পটম নাই, ব্লাড গ্লুকোজ পরীক্ষার রেজাল্টও স্বাভাবিক, মেডিসিন বা লাইফস্টাইল মডিফিকেসন যেমন ব্যায়াম বা ওজন কমানো ছাড়াই ব্লাড সুগার নরমাল থাকা। কিন্তু এরকম ঘটনা অতীব বিরল এবং এখনো প্রশ্নের সম্মুখীন। বেশীরভাগক্ষেত্রে যা হয়, সেটা হল রোগীর ডায়বেটিসের লক্ষন এবং ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রনে থাকে হয় মেডিসিনের জন্য, না হয় লাইফস্টাইল মডিফিকেসন যেমন খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম বা ওজন কমানোর জন্য। এতে রোগীর একটা ধারনা হতে পারে রোগী ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে সেটা কখনোই হয় না। এক্ষেত্রে রোগী যদি আবার অনিয়ন্ত্রিত জীবনে আবার ফিরে যায়, তবে আবার ডায়বেটিসের লক্ষণগুলো ফিরে আসে, রোগীর মনে একটা ধারনা হয়, রোগী একবার ভালো হয়ে গিয়ে আবার নতুন করে ডায়বেটিস হয়েছে।

>> রিপোর্টেতো ডায়বেটিস নাই ডাক্তারসাহেব, তারপরেও ডায়বেটিসের ঔষধ দিলো কেন?

> রোগীর লক্ষন (ঘনঘন পানির পিপাশা পাওয়া, বারবার প্রস্রাব হওয়া, ওজন কমে যাওয়া সহ আরও বেশকিছু) দেখে ডায়বেটিস মনে হলে প্রথম পরীক্ষাটাই হবে OGTT (ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট)। এটা ডায়বেটিস রোগীর জীবনে একবারই হবে এবং সে ডায়বেটিক কিনা সেটা এই পরীক্ষা থেকে জানা যাবে। এরপর থেকে রোগীর চেক-আপে আসলে যে পরীক্ষা করা হবে সেটা হল, Fasting & 2 hours after Breakfast ব্লাড সুগার লেভেল। এই পরীক্ষার রিপোর্ট নরমাল আসতেই পারে! কারন পেসেন্ট একবার ডায়বেটিক বলে ধরা পড়ার পরে সে খাবারদাবার নিয়ন্ত্রণ, মেডিকেসন আর ব্যায়াম সহ জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখলে পরীক্ষায় ব্লাড সুগার নন-ডায়বেটিক লেভেলে থাকবেই। দুঃখের বিষয় হল অনেকে, এমনকি ডাক্তাররাও OGTT আর Fasting & 2 hours after Breakfast ব্লাড সুগার এই দুই পরীক্ষার পার্থক্য গুলিয়ে ফেলে। দুটোর ইন্ডিকেসন আর ইন্টারপ্রিটেসন পুরোই ভিন্ন। একবার ধরা পড়া ডায়বেটিক রোগীর Fasting & 2 hours after Breakfast ব্লাড সুগার দেখে যদি যদি তাকে নন-ডায়বেটিক ভাবেন তো শুধু ভুলই হবে।

> আরেকটা ব্যাপার হল অনেক রোগী Fasting & 2 hours after Breakfast ব্লাড সুগার করার আগে তার চলমান প্রেস্ক্রিপ্সনের মেডিকেসন ইনসুলিন/ওরাল ড্রাগ না নিয়েই রক্ত দিয়ে পরীক্ষা করে। এতে ভুল রিপোর্ট আসবে, কারন ঐদিন তার রক্তে সুগার বেশী থাকবে। এতে বর্তমানে চলমান মেডিসিনগুলো কতোটুকু কার্যকর সেটা বুঝতে বিশাল সমস্যা হবে। এমনকি ডাক্তার ভুল করে ডোজ বাড়িয়ে দিয়ে রোগীর হাইপোগ্লাইসেমিয়া করিয়ে দিতে পারেন। তাই রোগীর ফলো-আপের আগেই জিজ্ঞেস করে নিন আজকের দিনের মেডিসিন সে খেয়ে এসেছে কি না।

>> রিপোর্টে তো ডায়বেটিস নাই ডাক্তারসাহেব, তারপরেও ডায়বেটিসের ঔষধ দিলো কেন?

> এই ব্যাপারটা অনেকটা বিতর্কিত। মেটফরমিন নামের ডায়বেটিক ড্রাগ অনেকসময় নন-ডায়বেটিক দের প্রেসক্রাইব করা হয়। এর পিছনে কিছু যুক্তি থাকে, যেমন পেসেন্ট মোটাসোটা অথবা OGTT করে পাওয়া প্রি-ডায়বেটিক স্টেটে (Impaired Fasting Glucose or Impaired Glucose Tolerance) থাকা রোগীদের লাইফস্টাইল মডিফিকেসনের সাথেসাথে অনেক সময় মেটফরমিন প্রেস্ক্রাইব করা হয় যাতে ভবিষ্যতে ডায়বেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় বা ডিলে করা যায়। মেটফরমিনের সাথে অন্যান্য ডায়বেটিক মেডিকেসনের পার্থক্য হল যে এটা দেহের সেলে ইনসুলিনের গ্রহনযোগ্যতা বাড়ায় সেলের ইনসুলিন রিসেপ্টরের দুর্বলতা কমিয়ে দিয়ে। কিন্তু নরমাল এন্টিডায়বেটিক মেডিকেসনের মতো ব্লাডসুগার কমায় না। তাই চিকিৎসাপত্রে মেটফরমিন থাকা মানেই ডায়বেটিস আছে কি না, অথবা নিজে দিলে কেন দিলেন সেটা রোগীকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়া উচিৎ।

>> ইনসুলিনের বদলে মুখে খাবার ঔষধ দেন তো স্যার, ইনসুলিন নিতে ভালো লাগে না।

> সব রোগীর নিয়মিত কমপ্লেন বা ডিমান্ড হল সিরিঞ্জের বদলে মুখে খাবার মেডিসিন দেয়া। আপাতদৃষ্টিতে মুখে খাবার ড্রাগগুলো কিছুই করে না, “একটা রসকস বিহীন লেবুর মতো মৃতপ্রায় পেনক্রিয়াস কে চাবুক চালিয়ে কিছু ইনসুলিন বের করার চেষ্টা চালায়।” একসময় পেনক্রিয়াস ক্লান্ত ঘোড়ার মতোই প্রান হারায়। তখন শেষ পর্যন্ত মুখে খাবার ড্রাগ থেকে ঠিকই ইনসুলিনেই কনভার্ট করতে হয়। তাই ডায়বেটিস যে লেভেলই থাক না কেন, সবথেকে ভালো ড্রাগ হল ইনসুলিন। রোগীকে কনভিন্স করাটাই শুধু ডাক্তারের ক্রেডিট। তাছাড়া দেহের ইনসুলিনের সাথে বাজারের ইনসুলিনগুলোর মিল থাকার কারনে সাইড এফেক্ট মুখে খাবার ড্রাগ গুলো থেকে অনেক কম এবং ৫/১০ বছর পরে ডায়বেটিসের কমপ্লিকেসন হবার ঝুকিও কমে যায় অনেকখানি ইনসুলিনের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে।

>> ডাক্তারসাহেব, আমার ওজনতো এতো বেশী না। তাহলে ডায়বেটিস কিভাবে হল?

> ওজন বেশী থাকাটা ডায়বেটিসের একটা রিস্ক ফ্যাক্টর। একমাত্র রিস্কফ্যাক্টর না। এরপরেও বুঝানোর পরেও অনেকে মানতে চায় না যে শরীরের অবসিটি না থাকলেও ডায়বেটিক হওয়া সম্ভব।
এরকম প্রতিদিন অসংখ্য প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে প্রতিদিনই নিজেরই নতুন অনেককিছু শেখা হয়ে যায়। ফাস্ট প্রফে সিলেবাসে গাইটনের ডায়বেটিস আর দ্বিতীয় প্রফে ফার্মাকোলজির এন্টি-ডায়বেটিক মেডিকেসন চ্যাপ্টার পড়ে মনেই হতো, এটাতো কতোই সোজা। এখন দিনদিন অজ্ঞতার পরিমান আবিষ্কার করে শুধুই মনে হচ্ছে, দিনকে দিন শুধু মূর্খই হচ্ছি। অনেক লম্বা আর বোরিং লেকচার হয়ে গেলো। প্রত্যেক পরিবারেই কারো না কারো এই রোগের সাথে পরিচিত হয়ে গেছে। সেই কথা চিন্তা করেই লিখা। কারো কৌতূহল কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারলে খুশী হবো।।
Share:

এক নজরে...



ডাঃ লালা সৌরভ দাস

এমবিবিএস, ডিইএম (বারডেম), বিসিএস (স্বাস্থ্য)

ডায়াবেটিস, থাইরয়েড এবং হরমোন বিশেষজ্ঞ (এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট)

সহকারী সার্জন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা

কনসালটেন্ট, ওয়েসিস হাসপাতাল, সিলেট

প্রাক্তন আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন), পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

মেম্বার অফ বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি

মেম্বার অফ আমেরিকান এ্যাসোসিয়েশন অফ ক্লিনিকাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট



Subscribe

Recommend on Google

Recent Posts